বাংলার এই প্রসিদ্ধ মিষ্টির দোকানে পাবেন চিরাচরিত বাঙালি মিষ্টির স্বাদ

10 minute
Read

Highlights বাংলার এই শতাব্দী প্রাচীন দোকানগুলোতে আজও পাওয়া যায় নানা স্বাদের চিরাচরিত বাঙালি মিষ্টি।

Disclaimer This post may contain affiliate links. If you use any of these links to buy something we could earn a commission. We are a reader supported website and we thank you for your patronage.

সবাই বলেন বাংলার মতো মিষ্টি ভাষা নাকি আর হয়না। কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন কী এই ভাষা এত মিষ্টি কীভাবে হল? হবে নাই বা কেন? মিষ্টি ছাড়া বাঙালির দিন শুরু হয় না আর শেষও হয়না মিষ্টি ছাড়া। শেষ পাতে একটু মিষ্টিই যদি না থাকে তাহলে খাবার খেয়ে একটুও তৃপ্তি হয়না। কলকাতায় নামকরা মিষ্টির দোকান গুনে শেষ করা যায়না। তবে শুধু কলকাতার কথাই বা কেন বলছি? গোটা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে ছরিয়ে আছে এমন কয়েকটি মিষ্টির দোকান যেখানে পাওয়া যাবে বাঙালি মিষ্টির চিরকালীন স্বাদ। আর এই সব মিষ্টির দোকানের বয়স আপনার দাদু বা ঠাকুরদার চেয়েও বেশি! এখন যুগের হাওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনেক রকমের ফিউশন মিষ্টি তৈরি হয়েছে। কিন্তু রসে ভরা ধবধবে সাদা রসগোল্লা, কড়া পাকের সন্দেশ, চমচম এসব মিষ্টির কদরই আলাদা। এবার গোড়া থেকে এত মিষ্টি মিষ্টি করছি,এসব শুনলে তো খিদে পেয়ে যাওয়ার কথা। কোনও চিন্তা নেই,  আমরা নিয়ে এসেছি এই বাংলার কয়েকটি প্রসিদ্ধ মিষ্টির দোকান যেখানে পাবেন বাংলার সেরা মিষ্টির সম্ভার।

বাঙালি মিষ্টির ইতিহাস

বাংলায় ইউরোপ থেকে সর্বপ্রথম এসে ঘাঁটি তৈরি করেছিলেন পর্তুগিজরা। এঁদের থেকেই নাকি বাঙালিরা ছানার ব্যবহার শিখেছিলেন। এর আগে বাংলায় মিষ্টি তৈরি হত মূলত মুড়ি, গুড়, নারকেল দিয়ে। তখন বাঙালিরা মুড়ি ও চিঁড়ের মোয়া, নাড়ু, মণ্ডা এসব খেত। মণ্ডা তৈরি হত চিনি দিয়ে।

 

১) ভীম চন্দ্র নাগ, স্ট্র্যান্ড রোড, রাসবিহারী

এই মিষ্টির দোকান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮২৬ সালে। তাহলে বুঝতেই পারছেন এই দোকানের আদতে কত বয়স। এই দোকানের সেরা মিষ্টি হল অবশ্যই রসগোল্লা। আর এখানে এই মিষ্টি এখন সেই পুরনো সময়ের মতো মাটির ভাঁড়ে করে দেওয়া হয়। দুজন ব্যক্তির এই দোকানে মিষ্টি খেতে আনুমানিক খরচ হবে ১০০ টাকা।

২) গাঙ্গুরাম সুইটস, চাঁদনি চক, গোলপার্ক

আপনি দক্ষিণে থাকুন বা কলকাতার উত্তরে, একবার যদি গাঙ্গুরামে না যান তাহলে আপনি কীসের বাঙালি? এই দোকানের বৈশিষ্ট্য হল বছরের পর বছর ধরে এই দোকান তাঁদের মিষ্টির স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখেছে।এই দোকানের সন্দেশ আর রসগোল্লা দুটোই খুব ভাল।

৩) সেন মহাশয়, শ্যামবাজার, গড়িয়াহাট

সেন মহাশয়ের দরবেশ একবার যে খেয়েছে সে বারবার গিয়েছে এই দোকানে। আনুমানিক ১৮৯৭ সালে এই দোকান প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানেই আপনি পাবেন জিভে জল আনা মিহিদানা আর সীতাভোগ। আমের সময় এখানকার আম সন্দেশ আর আনারসের সময় আনারস সন্দেশও বেশ জনপ্রিয়। এগুলো ছাড়াও সেন মহাশয়ের অন্যান্য জনপ্রিয় মিষ্টি হল নলেন গুড়ের সন্দেশ, মিষ্টি দই, রাবড়ি, মনোহরা, মালাই চপ, গোলাপি প্যাঁড়া এবং গোলাপের পাপড়ি দেওয়া সন্দেশ। সন্ধে বা সকালের জলখাবার হিসাবে এই দোকানের রাধাবল্লভির স্বাদও মনে রাখার মতো। কথিত আছে যে কথাশিল্পী শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো প্রথিতযশা সাহিত্যিক এই দোকানের মিষ্টি খেতে ভালবাসতেন।

৪) বলরাম মল্লিক ও রাধারমণ মল্লিক, ভবানীপুর, বালিগঞ্জ ফাঁড়ি, ইস্টার্ন বাইপাস, আনওয়ার শাহ রোড

ভীম নাগের মতো এই মিষ্টির দোকানও শতাব্দী প্রাচীন। এই দোকান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ১৮৮৫ সালে। কলকাতা তথা বাংলার অনেক তারকা ও বিখ্যাত ব্যবসায়ীরা এই দোকানের মিষ্টি খেতে ভালবাসেন। এমনকি কলকাতায় শুটিংয়ের কাজে এলে মুম্বইয়ের শিল্পীরাও এখান থেকে মিষ্টি নিয়ে যান। এই দোকানের বেকড রসগোল্লা ও বেকড মিহিদানা খুব জনপ্রিয়।

৫) চিত্তরঞ্জন মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, শোভা বাজার

১৯০৭ সালে এই দোকান তৈরি হয়। এখানকার রসগোল্লার স্বাদ অমৃতের মতো। ১০, ১৫ ও ২০ টাকা দামের রসগোল্লা এখানে পাওয়া যায়। ২০ টাকা দামের রসগোল্লার আকার বেশ বড় হয়।

৬) নলীন চন্দ্র দাস, নূতন বাজার

এখন কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে এঁদের দোকান আছে, কিন্তু মূল দোকানটি আজও অক্ষত। স্পঞ্জ রসগোল্লা,  বেকড রসগোল্লা এবং আম সন্দেশ এই দোকানের সবচেয়ে জনপ্রিয় মিষ্টি। ১৮৪১ সালে এই দোকান তৈরি হয়েছিল।

৭) কেসি দাস, বাগবাজার, ধর্মতলা

মিষ্টির দোকানের কথা হবে আর সেখানে কেসি দাসের কথা থাকবে না, এ প্রায় অসম্ভব ও অবাস্তব ব্যাপার। মিষ্টির জগতে এই দোকান হচ্ছে কিংবদন্তীর। এই দোকানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সারদা চরণ দাসের বাবা কৃষ্ণচন্দ্র দাস তৈরি করেছিলেন বিখ্যাত মিষ্টি রসমালাই। এই বংশের রক্তে রয়েছে একের পর এক সুস্বাদু মিষ্টি তৈরির প্রতিভা। কারণ কৃষ্ণচন্দ্র দাসের বাবা নবীনচন্দ্র দাস তৈরি করেন জগতবিখ্যাত রসগোল্লা। এই নিয়ে এক মজার গল্প চালু আছে। কথিত আছে একবার একতাল ছানা ভুলবশত রসের কড়াইতে পড়ে যায়। সেই রসে ভেজানো ছানার তাল দেখেই রসগোল্লা তৈরি করার আইডিয়া আসে নবীন চন্দ্র দাসের মাথায়। ১৮৬৬ সালে তৈরি হয় দাস পরিবারের প্রথম দোকান। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও যখন এই দোকানের মিষ্টির খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে তখন এঁরাই প্রথম ক্যানে করে মিষ্টি বিদেশে পাঠানো শুরু করেন। এখন অবশ্য অনেক মিষ্টির দোকান এই কাজ করে থাকে। কিন্তু ক্যানবন্দী মিষ্টি বিদেশে পাঠানোর প্রথম কৃতিত্ব অবশ্যই কেসি দাসের।

৮) হিন্দুস্থান সুইটস, যাদবপুর

যাদবপুর ছাড়াও কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে এঁদের দোকান। দক্ষিণ কলকাতার মানুষের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় দোকান হল এই হিন্দুস্থান সুইটস। সুস্বাদু রসগোল্লা ছাড়াও ফিউশন মিষ্টি তৈরিতে এঁরা সিদ্ধহস্ত।

৯) গুপ্ত ব্রাদার্স সুইটস

কলকাতার অন্যতম জনপ্রিয় একটি মিষ্টির দোকান এই গুপ্ত ব্রাদার্স। এখানে রসগোল্লা, সন্দেশ, মালাই চমচম ছাড়াও অন্যান্য বাঙালি মিষ্টি পাওয়া যায়। তাছাড়া গুপ্ত ব্রাদার্সে নোনতা স্বাদের জলখাবারও পাওয়া যায়।

১০) আদি হরিদাস মোদক মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, শ্যামবাজার

আনুমানিক ১৭৮০ সালে এই দোকান তৈরি হয়। এই  দোকানের বয়স ২৫০ পেরিয়ে গিয়েছে। এই মুহূর্তে মোদক বংশের সপ্তম ধারা দোকান চালাচ্ছে। এখানকার বিখ্যাত মিষ্টি হল ছানার জিলিপি, কালাকাদ ও ক্ষীরকদম। সকালে জলখাবার হিসাবে পাওয়া যায় লুচি ও আলুর তরকারি যা দেওয়া হয় কলাপাতায় করে।

১১) ভবতারিণী সুইটস, হাতি বাগান

১৯৫২ সালে তৈরি হয় এই দোকান। এই দোকান তৈরি করেছিলেন নিতাই চন্দ্র ঘোষ ও সৃষ্টি ধর ঘোষ। এখন এঁদের ছেলেরা এই দোকান চালান। এঁরা মিষ্টি তৈরির সময় খাঁটি গরুর দুধ ব্যবহার করেন। ভ্যানিলা রসগোল্লা ও কেশর চমচম এঁদের সবচেয়ে জনপ্রিয় মিষ্টি। ভ্যানিলা রসগোল্লা তৈরির সময় যে ভ্যানিলা ক্রিম ব্যবহার করা হয় সেটাও এঁরা নিজেরাই তৈরি করেন।

১২) গিরিশ চন্দ্র দে ও নকুড় চন্দ্র নন্দী, হেদুয়া

কলকাতার অন্যতম জনপ্রিয় মিষ্টির দোকান এটি। এখানে বিখ্যাত ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলি ও শচিন তেনডুলকরের নামেও মিষ্টি আছে। কলকাতার সিমলে অঞ্চলে বিখ্যাত মিষ্টি প্রস্তুতকর্তা ছিলেন গিরিশ চন্দ্র দে। তিনি তাঁর জামাই নকুড় নন্দীকে হুগলী অঞ্চলের জনাই থেকে নিয়ে আসেন কলকাতায়। শ্বশুর ও জামাই দুজনে মিলে এই দোকানকে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে যান। এখানকার বিখ্যাত মিষ্টি হল জলভরা সন্দেশ, চকলেট মালাই রোল ও গুড়ের স্যান্ডউইচ।

১৩) মাখনলাল দাস অ্যান্ড সনস, জোড়াবাগান

প্রায় দুশ বছর আগের দোকান। তৈরি হয়েছিল ১৮২৭ সালে। রামচন্দ্র দাস বলে একজন ময়রা বর্ধমানের খণ্ডগোস থেকে কলকাতায় এসে মিষ্টি বিক্রি শুরু করেন। রামচন্দ্র দাসের কোনও বংশধর ছিল না বলে মাখনলাল বলে একজনের হাতে তিনি দায়িত্ব দেন। আপাতত ষষ্ঠ জেনারেশন এই দোকান চালাচ্ছে। এখানকার জনপ্রিয় মিষ্টি হল রাতাবি, চকোলেট সন্দেশ ও মিষ্টি দই।

১৪) পুঁটিরাম, সূর্য সেন স্ট্রিট

১৮৫২ সালে এই দোকান তৈরি হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসের কাছে অবস্থিত অত্যন্ত জনপ্রিয় দোকান এটি। ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে যারা কলেজ স্ট্রিটে বই কিনতে আসেন তাঁরা সবাই এখানে একবার আসেন। স্টাফড গুলাব জামুন ও রসগোল্লাড় জন্য বিখ্যাত এই দোকান।

 

 

 

 

 

 

Logged in user's profile picture